,

হবিগঞ্জে অপরাধ কর্মকান্ড রোধে পুলিশের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এক বছরে কমেছে মামলা মোকদ্দমা, কমেছে দাঙ্গা হাঙ্গামাও

নিজস্ব প্রতিনিধি :: হবিগঞ্জে দাঙ্গা হাঙ্গামা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিয়েসহ নানা অপরাধ রোধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। এসব অপরাধ রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের টার্গেটে নিয়েছেন। জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘুরে ঘুরে করছেন অপরাধের কুফল ও করণীয় নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা। বিজয়ীদের খাতা, কলমসহ দিচ্ছেন আকর্ষণীয় উপহার। আর অংশগ্রহণকারীদের দিচ্ছেন মজাদার চকলেট। এতে ফলও মিলেছে বেশ। গত এক বছরে মামলা মোকদ্দমাতো কমেছেই, কমেছে দাঙ্গা হাঙ্গামাও। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা জানান, এ জেলা গ্রাম্য দাঙ্গা প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে গ্রাম্য দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগেই থাকতো। অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়েই একাধিক খুন হতো। ২/৫ টাকার জন্যও বিভিন্ন সময় বড় দাঙ্গার সৃষ্টি হতো। একাধিক লোক মারা যেতো। এ জন্য বেশ দুর্নামও ছিল। তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর প্রথম লক্ষ্যই ছিল এসব গ্রাম্য দাঙ্গা রোধ করতে হবে। তাই প্রথম টার্গেটে নিয়েছি শিক্ষার্থীদের। তাদেরকে মোটিভেশন করতে পারলে সব ধরণের অপরাধের ক্ষেত্রেই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। তারা যদি বাবা, চাচা, ভাইকে বলে তোমরা দাঙ্গায় গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের পরিবারের কি হবে? এসব কথার প্রভাব অনেক বেশি। তাছাড়া অপরাধের কুফল সম্পর্কে জানা থাকার কারণে তারা বড় হয়েও এসব অপরাধ থেকে বিরত থাকবে। পুলিশ সুপার বলেন, ইতোমধ্যে এর ফলও মিলেছে। গত এক বছরে দু-একটি ছোটখাট দাঙ্গার বাইরে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এসব দাঙ্গায় কেউ মারা যায়নি। মামলার সংখ্যাও কমেছে প্রায় সাড়ে ৬শ। আমার বিশ্বাস এ প্রক্রিয়া ধরে রাখতে পারলে এক সময় দাঙ্গার দুর্নাম গুছিয়ে হবিগঞ্জ দেশের আদর্শ জেলায় পরিণত হবে। জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাদক, দাঙ্গা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মোবাইল প্রযুক্তির অপব্যবহার, বাল্যবিয়ের কুফল ও করণীয় বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা এসব অপরাধ কীভাবে সংগঠিত হয়, এর প্রভাবে কী ক্ষতি হতে পারে, এসব অপরাধ থেকে নিজেদের কীভাবে বিরত রাখবে সে সম্পর্কে জানতে পারছে। আর পুলিশ সুপার এ উদ্যোগ নেয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যেই ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সামনে এসব অপরাধের কুফল সম্পর্কে তুলে ধরার কারণে তাদের মাঝেও সচেতনতা বাড়ছে। জেলা পুলিশের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় বড় কোনো দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। এতে একটিও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। হিসেব করার মতো মোট দাঙ্গা হয়েছে একটি। এক বছরে খুন হয়েছেন ৬৩ জন। যার একটিও দাঙ্গায় নয়। আর আগের বছর খুন হয়েছিলেন ৮৭ জন। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে একটি। ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৯৭টি। আর নারী নির্যাতন হয়েছে ২৮৬টি। অথচ ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নারী নির্যাতন হয়েছিল ৩৭৫টি। ৮টি ডাকাতি মামলার মাঝে দুটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এগুলো পারিবারিক ও লেনদেনের বিরোধের কারণে হয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। সব মিলিয়ে এক বছরে মামলা হয়েছে দুই হাজার ২০৮টি। আর আগের বছর মামলা হয়েছিল দুই হাজার ৮১৭টি। গেল এক বছরে মামলার সংখ্যা কমেছে ৬০৯টি।


     এই বিভাগের আরো খবর